ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ইট-পাথর আর কংক্রিটের এই শহর ছেড়ে নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে ঘরমুখো এসব মানুষ যাত্রাপথে বৃষ্টি বিড়ম্বনা ছাড়াও নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। তবে এসব সহ্য করেই সানন্দে ঘরে ফিরছেন রাজধানীবাসী।
প্রায় প্রতি ঈদেই টিকিটপ্রাপ্তি থেকে শুরু করে বাড়ি পৌঁছানো পর্যন্ত পথে পথে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় ঘরে ফেরা মানুষকে। শিডিউল বিপর্যয়, যানবাহনে যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ, সড়কের দুরাবস্থা- সব ভোগান্তি মেনে নিয়েই শেকড়ের টানে ঘরে ফেরে মানুষ।
এবারও একই অবস্থাতে বাস-লঞ্চ ও ট্রেনে করে প্রতিদিন বাড়ি ফিরছেন রাজধানীর লাখো মানুষ।
রাজধানী ছাড়া এসব মানুষের বড় একটি অংশ নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে কমলাপুর রেলস্টেশনে ভিড় জমাচ্ছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকেই তাদের উপচেপড়া ভিড় ছিলো স্টেশনে।
এদিন প্লাটফর্মে দাঁড়ানো ট্রেনগুলো ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ। এছাড়া কাঙ্খিত ট্রেনের অপেক্ষায় প্লাটফর্মে বসে থাকতে দেখা গেছে অসংখ্য যাত্রীকে। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিলো উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনগুলোতে।
সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য দুই সন্তানকে নিয়ে প্লাটফর্মে অপেক্ষা করছিলেন গৃহিণী সুমাইয়া আক্তার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বাচ্চাদের বাবা ব্যবসায়ী, উনি ঈদের আগেরদিন যাবেন। যে কারণে বাচ্চাদের নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে বাড়ি যাচ্ছি। সড়কপথে অতিরিক্ত যানজটের কারণে অনেকে ভোগান্তি পোহায়ে ট্রেনের টিকিট কাটতে হয়েছে। কিন্তু এখন স্টেশনে এত ভিড় দেখে মনে হচ্ছে ট্রেনে উঠে আসন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারব না।
তিনি বলেন, প্রতিবারই ঈদে ঘরে ফেরায় ভোগান্তি থাকে। তবে বাড়ি ফিরে প্রিয়জনদের মুখ দেখলে সব ভোগান্তি ভুলে যাই।
একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য অপেক্ষমাণ আশিকুর রহমান বলেন, উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনে এমনিতে অনেক ভিড় হয়। ঈদ আসলে তো কথাই নেই। অনেকবার এমন হয়েছে যে, টিকিট থাকা সত্ত্বেও সিট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিনি। প্রতিবার ঈদে ট্রেনে অতিরিক্ত ভিড় হয়, বিলম্ব তো আছেই। সব মিলিয়ে ঘরমুখো মানুষের বিড়ম্বনার শেষ নেই। তবুও শত বিড়ম্বনা উপেক্ষা করে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছি।
প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগির জন্য বিড়ম্বনা নিয়েও এভাবে ঘরে ফেরার মধ্যেই আমাদের আনন্দ- বলেন তিনি।
ঈদের ট্রেনের অগ্রিম টিকিট অনুযায়ী আজ তৃতীয়দিনের মতো রাজধানী ছেড়ে যাচ্ছে মানুষ। গত ২০ আগস্ট দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে যারা টিকিট পেয়েছেন, আজ তারা কমলারপুর থেকে কাঙ্খিত ট্রেনে চেপে বাড়ি ফিরছেন।
তবে আগামীকাল থেকে আরও বেশি ভিড় বাড়বে বলে মনে করছেন স্টেশনে দায়িত্বরতরা। তারা বলছেন, যাত্রীদের সুবিধার্থে আজ থেকে ১ সেপ্টেম্বর এবং ঈদের পরে ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর ৭ জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে।
এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রতিদিন সারাদেশে প্রায় ২ লাখ ৬৫ হাজার যাত্রী পরিবহন করছে রেলওয়ে।
এসব বিষয়ে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী জাগো নিউজকে বলেন, আশা করছি সবার ঈদযাত্রা সুন্দর হবে। স্টেশনে সবসময় মাইকে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে কেউ যেন ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ না করেন। যাত্রীদের যেন কোনো সমস্যা না হয় ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক রাখতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে তিনি জানান।