মোঃ দিদারুল আলম (দিদার)
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতায় ডুবেছে চট্টগ্রাম মহানগরী সহ আশেপাশের অনেক এলাকা। একাধিক স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনাও ঘটেছে।
গত ১ আগস্ট থেকে বৃষ্টি হচ্ছে চট্টগ্রামে। এক সপ্তাহ ধরে চলা এ বৃষ্টিপাতে নগরীর বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, শুলকবহর, মোহাম্মদপুর, কাপাসগোলা, চকবাজার, বাকলিয়ার বিভিন্ন এলাকা, ফিরিঙ্গিবাজারের একাংশ, কাতালগঞ্জ, শান্তিবাগ আবাসিক এলাকা, কে বি আমান আলী রোড, চান্দগাঁওয়ের শমসের পাড়া, ফরিদার পাড়া, পাঠাইন্যাগোদা, মুন্সীপুকুর পাড়, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, তিন পুলের মাথা, বড়পুল, ছোট পুল, রিয়াজউদ্দিন বাজার, মুরাদপুর, ষোলশহর, কমার্স কলেজ এলাকা এবং হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায় সড়কে ও অলিগলি পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার প্রধান সড়কের কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর, আবার কোথাও বুক ছুঁই ছুঁই পানিতে তলিয়ে গেছে। এমনকি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনে সামনে কোমর সমান পানি জমেছে।
সীতাকুন্ডে চার দিন ধরে ভারী বর্ষণে অন্তত ২০টি গ্রাম পানিবদ্ধ হয়ে পড়েছে। পয়োনিষ্কাশনের নালা ভরাট করে স্থাপনা গড়ে তোলায় এ বছর সবচেয়ে বেশি পানিজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে রয়েছে বহু মানুষ। বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলছেন স্থানীয় চেয়ারম্যানরা।
এদিকে টানা বর্ষনেণ হাটহাজারী উপজেলার মন্দাকিনী, পূর্ব ফরহাদাবাদ, সেকান্দর পাড়া, পূর্ব ধলই, মাইজপাড়া, পূর্ব এনায়েতপুর, মনোহর পাড়া, উত্তর ছাদেক নগর, গুমানমর্দ্দন বড়ুয়া পাড়া, কাটাখালীর কুল, মাস্টার পাড়া, রুদ্রপুর, কাজিরখীল, মোহাম্মদপুর, মীরেরখীল, কদলবাড়ী, মোজাফফরপুর, ভাগিরঘোনা, রহিমপুর, ইছাপুর, পূর্ব মেখল, ভবানীপুর, উত্তর মার্দাশা, মাদারীপোল, সাইনবোর্ড, খলিপারঘোনা, বাথুয়া, কুয়াইশ, বুড়িশ্চর, মধ্যম মার্দাসা গড়দুয়ারা, লোহারপোল, শিকারপুর, খন্দকিয়া, নাঙ্গলমোড়া, কুমারীকুল, সিকদারপাড়া, চারিয়া (আংশিক), মধুরঘোনা, আনন্দ বাজার, দক্ষিণ মেখল, পূর্ব ফতেপুর, মেহেরনেগা, মাছুয়াঘোনা প্রভৃতি এলাকার ৪০টি গ্রামের দুই লক্ষাধিক লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ওপরের অংশ থেকে ঢলের পানি কমলেও নিচু এলাকার বন্যা পরিস্থিতির ক্রমে অবনতি হচ্ছে। দক্ষিণ হাটহাজারীর শিকারপুর ও বুড়িশ্চর এলাকার কৃষ্ণখালী ও কুয়াইশ খাল দীর্ঘদিন সংস্কার ও খনন না করায় এই দুই ইউনিয়নের গ্রামীণ সড়ক ও রাস্তাঘাট, এমনকি বসতঘর পানিতে তলিয়ে গেছে।
রাউজান উপজেলার উরকিরচর, পশ্চিম গুজরা, নোয়াপাড়া, বাগোয়ান, পূর্বগুজরা, বিনাজুরী ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের ওপর দিয়ে তীব্র স্রোতে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কোনো কোনো রাস্ত হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। হালদা ও কর্ণফুলীর পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে মানুষের বাড়ি-ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ হাট বাজারের দোকানগুলো হাঁটুপানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। অনেকে ঘরে চলছে না রান্না। গৃহপালিত পশু নিয়ে পড়তে হয়েছে চরম দুর্ভোগে।
বোয়ালখালী উপজেলায় পানিতে কালুরঘাট ফেরির অ্যাপ্রোচ সড়ক, পন্টুন ও বেইলি সেতু ডুবে থাকায় পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। সকাল থেকেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পানি ঢুকে পড়ায় সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়েও ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের।
পটিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রায় ৫৩ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ রাস্তাসহ পৌরসভার ড্রেন ও সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে ডুবে গেছে প্রায় তিন হাজার চাষের পুকুর। এতে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে পটিয়ার মৎস্য ব্যবসায়ীদের।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের আবাসিক এলাকা শাহী কলোনিতে এ ঘটনা ঘটে। এতে জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন কার্যালয়ের প্রহরী মোহাম্মদ হানিফের ঘর ভেঙে যায়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের ফলে বন্ধ আছে অভ্যন্তরীণ যান চলাচল।
WWW.DESHYNEWS24.COM/REGISTRATION NO-52472/2024
Leave a Reply