বিশেষ প্রতিনিধিঃ
মানব পাচারকারীদের জন্য বাংলাদেশ একটি সুবিধাজনক স্থান। সীমান্তবর্তী ১৬টি জেলাকে মানব পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করে পাচারকারীরা । সমুদ্রপথে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিদের অনিয়মিত অভিবাসন আঞ্চলিক সমস্যায় রূপান্তরিত হয়েছে। আশ্রয়ের জন্য এদেশে আসা রোহিঙ্গারা এখন চোরাচালান, অবৈধ অভিবাসন ও মানব পাচারে জড়িত হয়ে বাড়িয়েছে টেনশন-ভোগান্তি। সোমবার রাতেও পাচার হতে যাওয়া ৩৫ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়ে। সচেতনতা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা গেলেই কেবল মানবপাচার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।'কক্সবাজারে আয়োজিত 'মানবপাচার' প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেছেন।
সোমবার (১৪ আগস্ট) সমুদ্র সৈকতের তারকা হোটেল সীগালের সন্মেলন কক্ষে ইউএসএইড ও উইনরক ইন্টারন্যাশনালের আয়োজনে নজরুল ইসলাম শান্তোর সঞ্চালনায় দিনব্যাপী কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, ডেপুটি চীফ অফ পার্টি এইচএম নজরুল ইসলাম এবং এতে মানবপাচারের উপর ডকুমেন্টারি তথ্য চিত্র উপস্থাপন করেন আমেরিকান নাগরিক উইনরক ইন্টারন্যাশনালের সিইও ফ্লিডম্যান।
এইচএম নজরুল ইসলাম বলেন, মানব পাচার বিশ্বব্যাপী একটি মানবাধিকার সমস্যা। প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ২৫ মিলিয়ন বা আড়াই কোটি নারী, পুরুষ ও শিশু পাচারের শিকার হয়। যাদের বাণিজ্যিকভাবে যৌনকাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে, বলপূর্বক শ্রম ও ঋণ-দাসত্ব হিসেবে কেনা-বেচা করা হয়। পাচারকারীরা বিশ্বের প্রতিটি দেশের অসহায় মানুষকে তাদের শিকারে পরিণত করার মাধ্যমে শত হাজার কোটি টাকা (বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার) মুনাফা করে থাকে। কক্সবাজারে সোমবার রাতে গাড়ির কাউন্টার হতে ৩৫ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে শৃঙ্খলা বাহিনী। এসময় দুইজন রোহিঙ্গা পাচারকারীও আটক হন।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সমাজের একশ্রেনীর দালাল চক্র পাচারকারীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মানব পাচারের ঘটনা ঘটায়। মানব পাচারের শিকার হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া ভুক্তভোগীদের (সারভাইভর) উন্নত সেবা দিয়ে তাদেরকে সমাজে ফিরিয়ে পুনঃএকত্রীকরণে (পুনর্বাসনে) সহায়তা করতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সারভাইভর-কেন্দ্রিক কর্মকান্ডকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সবাই যার যার অবস্থান থেকে সোচ্চার হলেই মানব পাচার বিরোধী কার্যক্রম আরো জোরদার এবং অপরাধীদের কার্যকরভাবে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আশেক উল্লাহ রফিক এমপি বলেন, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, কর্মসংস্থানের সংকট আর উন্নত জীবনের আশায় থাকা নারী, শিশু ও বিভিন্ন বয়সি মানুষ পাচারকারির টার্গেটে পড়ে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্রগুলোর সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল কার্যক্রম হচ্ছে মানব পাচার। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এই অপকর্মের জন্য ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। সরকার সব ধরনের মানব পাচার, বিশেষ করে নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে নতুন আইন প্রণযন, পাশাপাশি পাচার বিরোধী বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে ।
বক্তারা বলেন, মানব পাচার প্রতিরোধে সরকার, এনজিও, নাগরিক সমাজ ও সকল নাগরিকের অংশীদারিত্বের শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য সকলে মিলে কাজ করতে হবে। তা হলেই আমাদের সম্মিলিত কাজ ও অঙ্গীকারের মাধ্যমে আমরা মানব পাচার প্রতিরোধে ও পাচারের শিকার ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারব।
মানব পাচারকারীদের তালিকা তৈরি, কমিটির কার্যক্রম বৃদ্ধি, রোহিঙ্গা পাচারকারীদের চিহ্নিত ও মানব পাচারের রুটে নজরদারি বাড়ানোর মতামত ব্যক্ত করেন।
এতে, কক্সবাজার গেস্ট হাউস-হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেস সিকদার, মহিলা চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি জাহানারা ইসলাম, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি নজিবুল ইসলাম, টুয়াকের সভাপতি রেজাউল করিম রেজা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।