বিশেষ প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরের কালীগঞ্জে নতুন কর্মের সন্ধানে বাড়ি থেকে বের হয়ে পলাশ থানার পলাশ বাগপাড়া প্রান-আরএফএল কোম্পানিতে না ডুকতে পেরে বাড়ি ফেরার পথে দুই বান্ধবীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে একজনকে ধর্ষণ ও অপরজনকে দলবদ্ধ শ্লীলতাহানি করে বখাটেরা।
সোমবার (১৪ আগস্ট) রাত সাড়ে ০৯টার দিকে কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের ভাটিরা এলাকার ইটাখরাই বিলের দৃষ্টিনন্দন নামক কাচারাস্তার পাশে সেচ পাম্পের নিকট সড়কের ব্রিজে এ ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট ) দুপুরে ০৮ জনের নামে এবং অজ্ঞাত আরো ০৪ জনের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক অপহরণ, শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ ও সহায়তার অভিযোগে মামলা দায়ের হয় (মামলা নাম্বার ৫-৮-২৩)
বিকেলে ধর্ষণ মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার যুবতীর বাড়ি উপজেলার মোক্তাপুর ইউনিয়নের বড়গাঁও গ্রামে এবং অপরজন শ্লীলতাহানির শিকার যুবতীর বাড়ি উপজেলার মোক্তাপুর ইউনিয়নের মোক্তারপুর গ্রামে।
পুলিশ জানায়, সোমবার (১৪ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ধর্ষণের শিকার নারী ও চার যুবককে আটক করে স্থানীয়রা। পরে কালীগঞ্জ থানায় খবর দিলে, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থানায় নিয়ে আসে।
গ্রেপ্তারকৃত ৪জন হলো কালীগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের বাগবাড়ি এলাকার বাদল মিয়ার পুত্র নাদিম (২০), একই এলাকার আব্দুল জলিলের পুত্র জাকারিয়া (১৯), উপজেলার বাহাদুরশাদী ইউনিয়ন শ্রমিকলীগ নেতা ফিরোজ সরকারের পুত্র মেহেদী (১৮), বাশাইর এলাকার মিন্টু মিয়ার পুত্র শাকিব(১৯) আর পলাতক আসামিরা হলো, ভাটিরা এলাকার বাবুলের ছেলে মহিউদ্দিন (৩৫), মৃত সোবহানের ছেলে জাকারিয়া (৩৫), রমিজ উদ্দিন রুমির ছেলে হোসেন (৩৫) এবং সাইদের ছেলে সায়েম (৩০)।
মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী একা ও ঐশি (ছদ্মনাম) দুজন পূর্ব পরিচিত এবং বান্ধবী। একা অনেক দিন আগেই পলাশ উপজেলায় অবস্থিত প্রাণ-আরএফএল কোম্পানিতে চাকরি করতো। সোমবার (১৪ আগস্ট) কোম্পানিতে নতুন করে চাকুরিতে যোগ দিতে বিকেল আনুমানিক ০৫টার দিকে ঐশি (১৮) বাড়ি থেকে বের হয়। অপরদিকে তার বান্ধবী একা (২২) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে প্রাণ কোম্পানীর গেইটে পৌঁছায়। কোম্পানীতে প্রবেশের নির্ধারিত সময় অতিক্রম হওয়ার কারনে তারা ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। সে সময় ঐশি তার বান্ধবি একাকে বলে পাশেই আমার এক আত্মীর বাড়ি আছে। দেখ রাত হয়ে গেছে তাই চলো আমরা দু’জনে ঐখানে গিয়ে আজ রাতটা থেকে যাই। পরে ঐশি তার মোবাইল ফোন থেকে নাদিমকে কল করে জামালপুর খেয়াঘাট আসতে বলে। দুই বাদ্ধবী নৌকা যোগে নদী পার হইয়া জামালপুর থেকে নাদিমের অটোরিক্সায় বাগবাড়ি নাদিমের বাড়ির দিকে রওয়ানা করে। কিছুদূর যাওয়ার পর পথিমধ্যে রাত আনুমানিক- ০৮.৪৫ ঘটিকার সময় একই এলাকার আব্দুল জলিলের পুত্র জাকারিয়া (১৯), অটোরিক্সা থামাইয়া উপজেলার বাহাদুরশাদী ইউনিয়ন শ্রমিকলীগ নেতা ফিরোজ সরকারের পুত্র মেহেদী (১৮), অটোরিক্সায় উঠায় এমন সময় বাশাইর এলাকার মিন্টু মিয়ার পুত্র শাকিব(১৯) উপস্থিত হয়। পরে আসামীদের পূর্বপরিকল্পিত ভাবে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ফুসলাইয়া একা ও ঐশিকে অটো রিকশায় নিয়ে ভাটিরা এলাকার ইটাখরাই বিলের মাঝ দিয়ে চলা দৃষ্টিনন্দন নামক সড়কের পাশে থাকা বিএডিসি সেচ পাম্প সংলগ্ন ব্রিজের দিকে নিয়ে যায়। সে সময় আসামিরা ভুক্তভোগীদের সঙ্গে শ্লীলতাহানি করতে থাকে। এর মধ্যে আসামি মহিউদ্দিন, জাকারিয়া, হোসেন, সায়েমসহ অজ্ঞাত আরো ৩/৪ জন ঘটনাস্থলে এসে ঐশিকে টেনে হেঁচড়ে ওই ব্রিজের উপরে নিয়ে অনুমানিক রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাদের কেউ একজন ঐশিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
ঐশি প্রতিবাদ করিলে পাশেই বিলে মাঝে :মাছ ধরতে থাকা ফরিদের ছেলে আগাইয়া আসিলে ফিরোজ সরকারের পুত্র মেহেদী (১৮) চাকু দিয়া তাকে ভয় দেখায় এবং ধাওয়া দেয় পরে ওই যুবক এলাকায় গিয়ে চায়ের দোকানে বসে থাকা লোকজনকে ঘটনা জানায়। সে সময় স্থানীয় প্রায় ৩০/৪০ জন লোক লাঠিসোটা নিয়ে ঘটনাস্থলে রওনা হলে আসামিরা দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ওই সময় এলাকার লোকজন চারজনকে আটক করে এবং ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করে থানায় খবর দেয়া। পরে ঘটনাস্থল থেকে ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। আর স্থানীয়রা আটক আসামিদের থানায় সোপর্দ করে।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফায়েজুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গ্রেপ্তারকৃত চারজনকে মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগীর শারীরিক পরীক্ষার প্রস্তুতি চলমান। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তাররে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।