দেশের অন্যতম কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন বলে দাবীদার হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠনের পর অন্তর্ভুত নেতাকর্মীদের চাপে শীর্ষ নেতারা অনেকটা নড়েচড়ে বসেছে।
বিশেষ করে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে মামলায় জর্জরিত নেতাদের মামলা থেকে অব্যাহতি এবং কারাবন্দিদের মুক্তির বিষয়ে তারা একটা সুরাহা চান। যদিও বিষয়টি তারা এখনও প্রকাশ্যে নিয়ে আসেনি। সংগঠনের শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, নির্বাচনের আগে এ বিষয়ে সুরাহা করা না গেলে; পরে সরকার বিষয়টি আর গুরুত্ব দিবে না।
ইতোমধ্যে এ বিষয়ে নানা পরিকল্পনার বিষয়ে ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা আগামীকালের সভার আগে এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি নয়। তবে তারা কৌশলী হয়ে বলছেন, এখনই কঠোর কর্মসূচি দিয়ে সরকারের মুখোমুখি হতে চাই না হেফাজত। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি উপর নির্ভর করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা।
এক্ষেত্রে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা ও কারাবন্দীদের মুক্তির বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এজন্য শেষবারের মতো সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে চায় হেফাজত। এতে আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার বিষয়টি বিবেচনার চাপ রয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের। তবে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কর্মসূচি নিয়ে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার হেফাজতে ইসলামের আমীরের পরিচালিত মাদ্রাসায় নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম পরিচিতি সভা ডাকা হয়েছে। ওই দিন সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদ্রাসায় এ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী। উক্ত পরিচিতি সভায় হেফাজতের আমির আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী সভাপতিত্ব করবেন বলে তিনি জানান।
হেফাজতের বেশ কয়েকজন শীর্ষ ও তৃণমূল নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা সারা দেশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা এবং কারাবন্দীদের মুক্তি নিয়ে অনেকটা চাপে আছেন। বেশ কিছু নেতাকর্মীর কারামুক্তি মিললেও এখনও তাদের মতে, সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত নেতা মাওলানা মামুনুল হক, মুনির হোসেন কাসেমী, নূর হোসাইন নূরানী, রফিকুল ইসলাম মাদানী কারাবন্দী। এছাড়া র্শীষ নেতাসহ শত শত নেতার একাধিক মামলায় বিচার প্রক্রিয়াও শুরু হওয়ায় প্রতিনিয়তই তাদের আদালতে নিয়মিত দৌঁড়ঝাপ করতে গিয়ে তারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন।
তাই তারা সরকারের উপর চাপ তৈরি করে মামলা থেকে অব্যাহতি এবং কারাবন্দীদের মুক্তির বিষয়ে দ্রুত সুরাহায় পৌঁছাতে চান। সদ্য কারামুক্তি পাওয়া এবং হেফাজতে ইসলামের পূর্ণগঠিত কমিটির সহকারী মহাসচিব মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী বলেন, সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী জেলে রয়েছেন। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলা প্রত্যাহার ও নেতাকর্মীর মুক্তির বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এজন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এটা না হলে হেফাজত কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য হবে।
তবে কর্মসূচি দেওয়ার আগে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিটা বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগেই দেশের প্রতিটি উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে হেফাজতের অবস্থান শক্তিশালী করতে সংগঠন পুনর্গঠন পরবর্তী নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাই, এই সভাকে গুরুত্ব দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা সভাস্থলের দিকে রওনা হয়েছেন বলে জানা গেছে। উক্ত সভায় সংগঠনের হারানো জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাই, এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা উপস্থিত হবেন বলে জানা গেছে।পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ের সারাদেশের হেফাজত নেতাকর্মীরা আগামীকালের সভায় কী সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচি আসছে সেদিকে চেয়ে আছেন।
এ ব্যাপারে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মীর ইদ্রিস বলেন, নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম সভায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। নেতাকর্মীদের কারামুক্ত ও মামলার বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে দ্রুত ইতিবাচক সাড়া না পেলে শেষ পর্যন্ত কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য হবে হেফাজত।
সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে প্রয়োজনে আলেম-ওলামা এবং হেফাজত নেতাকর্মীদের মামলার থেকে অব্যাহতি ও কারামুক্ত করতে ঘোষিত কর্মসূচিতে দেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের যুক্ত করা হবে।
প্রসঙ্গত, অদৃশ্য কারণে ২০২০ সালে বিলুপ্ত কমিটির সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে চলতি বছরের গত ৩১ আগস্ট হেফাজতে ইসলামের ৫৩ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদসহ ২০২ সদস্যের নাম প্রকাশ করে আরও ৯ জনের অন্তর্ভূক্তি সুযোগ রেখে ২১১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়।