স্বামীর আগের স্ত্রীর সন্তানকে নিজের কাছে রাখতে চাননি সৎমা পারভীন সুলতানা। এ কারণে দু’বছরের শিশু আয়েশাকে প্রতিনিয়ত মারপিট করতেন তিনি। শুধু তাই না, মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে ও হাত বেঁধে দু’বছরের এই শিশুকে নির্যাতন চালাতেন পারভীন। এসব অভিযোগে শেষমেশ সৎমা খোলাডাঙ্গা গ্রামের পারভীন সুলতানাকে আটক করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
অন্যদিকে,মামলা করার কথা বলে পালিয়ে গেছে বাবা ওয়াসকুরুনি পিন্টু। কোতোয়ালি থানার এসআই জয়ন্ত সরকার এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রাজ্জাক সোমবার বিকেলে শহরের খড়কি ধোপাপাড়ার ভাড়া বাসা থেকে পারভীনকে আটক করে। মঙ্গলবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
পুলিশ জানায়, আট থেকে ১০ বছর আগে ওয়াসকুরুনি পিন্টুর সাথে নিহত আয়েশার মা জান্নাতুলের বিয়ে হয়। তাদের দু’টি সন্তান থাকা অবস্থায় পিন্টুর সাথে মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় পারভীনের। এরপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে। বিষয়টি জানাজানি হলে পিন্টুর সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে জান্নাতুলের।
২০১৮ সালে পিন্টু পারভীনকে বিয়ে করেন। তখন থেকে তারা খোলাডাঙ্গা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকেন। গত পাঁচ মাস আগে পিন্টুর আগের স্ত্রী জান্নাতুল তাদের দু’ সন্তান আয়েশা ও তার বড় ভাইকে বাবা পিন্টুর কাছে রেখে যান। তখন থেকে পারভীন সৎ সন্তানদের উপর অত্যাচার শুরু করেন। বিষয়টি নিয়ে পিন্টু ও পারভীনের মধ্যে প্রায়ই গোলোযোগ হতো।
সর্বশেষ, গত ১৩ জানুয়ারি সকালে বাড়ি থেকে পিন্টু বের হয়ে গেলে ছেলেকে খেলার কথা বলে বাড়ি থেকে বের করে দেন পারভীন। পরে শিশু আয়েশাকে বেঁধে ঝাড়ু দিয়ে মারপিট করেন। শিশুটির শরীর থেকে খামচি দিয়ে মাংস তুলে ফেলেন। একপর্যায়ে শিশু আয়েশার চুল ধরে পাশের একটি দেয়ালের সাথে ঘষা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতবিক্ষত করেন। একপর্যায়ে শিশু আয়েশা অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এরপর তড়িঘড়ি করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান পারভীন। হাসপাতালের ডাক্তার আয়েশাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তখন পারভীন মনগড়া কথা বলতে থাকেন। হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করে নিজেই কান্নাকাটি করতে থাকেন তিনি। পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ বাবা পিন্টুর জিম্মায় দেয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পারভীনকেও ছেড়ে দেওয়া হয়।
পুলিশ আরও জানায়, ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। পরবর্তীতে পারভীনের মোবাইল ফোনেই নির্যাতনের ছবি পায় পুলিশ। এছাড়া, আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে ঘটনার সত্যতা যাচাই করে পারভীনকে আটক করে পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রাজ্জাক জানান, প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে আয়েশা কিছুটা মানসিক প্রতিবন্ধী ছিল। সৎ দু’সন্তানকে ক্ষতি করার পরিকল্পনা করতে থাকেন তিনি। তারই অংশ হিসেবে পরিকল্পিতভাবেই আয়েশাকে হত্যা করেছেন তার সৎ মা পারভীন। এঘটনার সাথে অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা সে বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন। আটকের পর তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আরও তথ্য বের হবে বলে জানিয়েছেন এসআই রাজ্জাক।