বিশেষ প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরের কালীগঞ্জে নেশাগ্রস্ত ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করে পুলিশের নিকট আত্মসমর্পণ করলেন জন্মদাতা পিতা।মাদকাসক্ত ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ পরিবারের লোকজনসহ এলাকাবাসীও। ছেলের মারধর আর অত্যাচার অতিষ্ঠ হয়ে ঘুমন্ত ছেলেকে তার স্বয়ং কক্ষে গাছ কাটার কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করলেন তার বাবা।
ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার সকালে কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর পূর্ব পাড়া গ্রামের আব্দুর রশীদ বাগমারের বাড়িতে।
নিহত প্রবাস ফেরত মাদকাসক্ত কাউসার বাগমার (২৪) আব্দুর রশিদ বাগমারের ৩ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে সবার ছোট।
নিহতের পারিবার ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানাযায়, মোঃ কাউছার বাগমার প্রায় চার বছর প্রবাসে( সৌদি আরব) চাকুরী করে প্রায় ১ বছর পর্বে দেশে চলে আসে। বিদেশে যাবার আগে সে এলাকার নেশাগ্রস্থদের সাথে চলাফেরা করায় তার পিতা আব্দুর রশিদ তাকে ভালো করার জন্য বিদেশ পাঠিয়ে দেয়। ৪ বছর বিদেশে থেকে দেশে ফিরে পুনরায় এলাকার মাদকাসক্তদের ( ইয়াবা খোরদের)সাথে চলাফেরা শুরু করে কাউছার। এক পর্যায়ে সে আবারও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে,গত এক বছরে প্রবাসের জমানো টাকা নেশা ও জুয়া খেলে শেষ করে আরো টাকার জন্য সে প্রতিনিয়ত ঝগড়া সহ তার পরিবারের লোকজনদের মারধর করতো। এ নিয়ে এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে একাধিকবার সালিশ দরবার করেও কোন ফল পায়নি তার পরিবার।অবশেষে মাকে মেরে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে নিজের ব্যবহৃত গাছ কাটার কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে ছেলেকে হত্যা করে পুলিশের হাতে আত্মসমর্পণ করেন তার পিতা আব্দুর রশিদ বাগমার।
নিহত কাউসারের মা মোসলেমা বেগম বলেন, কাউছার জুয়া খেলাসহ মাদকাসক্ত ছিল। জুয়া ও নেশার(ইয়াবা) কেনার টাকার জন্য সে প্রায়ই বাড়িতে ঝগড়া বিবাদ, ভাংচুর করাসহ আমাদের মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিতো। গত কয়েকদিন ধরে বাড়ীর ভিটা থেকে ২ শতাংশ জমি বিক্রি করে টাকা দেয়ার জন্য তার বাবার উপর চাপ সৃষ্টি করে। মঙ্গলবার সারারাত নেশা করে ও জুয়া খেলে বুধবার ভোরে বাড়ীতে এসে টাকা চাইলে আমি না করে দেয়ায় আমাকে পিটিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।পরে বিষয়টি তার বাবা জানতে পেরে ক্ষোভে দুঃখে ঘুমন্ত ছেলেকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
নিহতের বড় ভাই আশরাফুল জানান"আমার ভাই কাউসার সারারাত বাড়ির বাইরে থাকতো এবং মাদক সেবন করতো ও জুয়া খেলতো।মাদকের জন্য প্রায়ই মায়ের কাছ থেকে টাকা চাইত।মা টাকা না দিলে বাড়ির আসবাবপত্র ভাংচুর করতো ও মাকে মারধরও করতো।গতকাল ও সে সারারাত বাহিরে ছিলো। সকালে বাড়িতে এসে মাকে টাকার জন্য গালিগালাজ করে ও মেরে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মা কাঁদতে কাঁদতে বাবাকে ঘটনাটি বলে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। তার কিছুক্ষণ পর এ ঘটনা ঘটে। শব্দ পেয়ে আমরা দৌড়ে এসে কাউছারকে তার ঘরের খাটের উপর রক্তাক্ত অবস্থা পড়ে থাকতে দেখি,পরে বাবাকে খুঁজে বাড়ির পাশের রাস্তায় রক্তমাখা অবস্থা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। এর কিছুক্ষণ পর কালীগঞ্জ থানা পুলিশ আমাদের বাড়ীতে আসলে বাবা এ ঘটনার কথা সবার সামনে স্বীকার করে।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইন চার্জ মোহাম্মদ মাহাতাব উদ্দিন ঘটনা সততা স্বীকার করে বলেন-নিহতের প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট প্রতিবেদন শেষে লাশের ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মরগে প্রেরণ করা হয়েছ। অপরদিকে ঘটনার সাথে জড়িত নিহতের বাবাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।