মোঃ নিয়াজুল হক, সিলেট-
সিলেটে ঈদের বাজার জমে উঠেছে। তবে গত বারের মতো এবারও ঈদ মার্কেটে ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে পাঞ্জাবি ও থ্রি-পিস। তারপরই শাড়ি ও গহনা। এরমধ্যে দেশীয় পাঞ্জাবি বিক্রির শীর্ষে থাকলেও থ্রি-পিসে ভারতীয় কাপড়ের চাহিদা বেশি। বিক্রেতারা বলছেন, এতোদিন মার্কেটে তেমন ক্রেতা না থাকলেও এখন মার্কেট বিপণী বিতানে ভিড় বাড়ছে। এতোদিন বিত্তবানদের আনাগোনা থাকলেও এবার ভিড় করছেন মধ্যবিত্তরা।
বিক্রেতারা বলছেন, বিত্তবানদের টাকার অভাব নেই। তাই শুরুতেই তারা কেনাকাটা সেরে ফেলেন। আর মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের শপিং শুরু হয় রমজানের শেষে। কারণ তাদের সবাই চাকরিজীবী। মাসের শেষে বেতন ঈদ বোনাস পাওয়ার পর তারা শপিং শুরু করেন। তাই এখন থেকে পুরোদমে শপিং জমবে বলে তাদের ধারণা।
আজ ৩ এপ্রিল ( ২৩ রমজান ) সিলেট নগরীর একাধিক মার্কেট, শপিংমল ও বিপণী বিতান ঘুরে দেখা যায়, পাঞ্জাবির মধ্যে দেশীয় কাপড়ের তৈরি সুতি ও সিল্কের চাহিদাই বেশি। আর থ্রি-পিস ও শাড়ির মধ্যে ৪০ শতাংশ দেশীয় এবং ৬০ শতাংশ ভারতীয় কাপড়ের ক্রেতা বেশি।
আড়ংয়ের বিক্রেতা জানান, তাদের এখানে সব কাপড়ই দেশি। পাঞ্জাবি ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকার মধ্যে দাম রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সিল্ক পাঞ্জাবির দাম বেশি। আর সুতির মধ্যে শর্ট কুর্তির দাম হাজার টাকা থেকে শুরু। লং পাঞ্জাবির দাম তারচেয়ে বেশী। ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি দাম হলো সিল্ক কাপড়ের পাঞ্জাবির। এছাড়া রয়েছে দেশীয় কাপড়ের থ্রি-পিস, সিঙ্গেল পিস, সুতি ও সিল্ক শাড়ি, ছেলেদের পায়জামা, জুতা, ছোটদের সব পোশাক এবং নারীদের অলঙ্কারসহ যাবতীয় সামগ্রী। তবে ঈদ ঘিরে ৫টি আইটেম বেশি বিক্রি হয়। এগুলো হলো পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, শাড়ি, গহনা ও জুতা। শাড়ির দাম কোয়ালিটি ভেদে ৯০০ টাকা থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত। আর জুতা ৭০০ থেকে সাড়ে ৩ হাজার। আর গহনাও প্রকার ভেদে দামের তফাৎ রয়েছে।
দেশীয় কাপড়ের নামকরা ব্রান্ড দেশী-দশের একজন বিক্রেতা জানান, তাদের এখানে সবই দেশীয় পণ্য। এরমধ্যে রয়েছে ছেলেদের পাঞ্জাবি, পায়জামা, প্যান্ট শার্টসহ যাবতীয় পণ্য। আর নারীদের শাড়ী, থ্রি-পিস, সিঙ্গেল পিস, প্লাজোসহ নানান ডিজাইনের পোশাক। এরমধ্যে বিক্রির শীর্ষে ছেলেদের পাঞ্জাবি, পায়জামা ও মেয়েদের থ্রি-পিস ও প্লাজো। পাঞ্জাবির দাম ২২০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে। আর থ্রি-পিসের দাম ২ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা। এরমধ্যে প্রতিদিনই আসছে নিত্য-নতুন ডিজাইন। সে সাথে বাড়ছে ক্রেতা।ব্লু ওয়াটার শপিং সেন্টার " সাফি পাঞ্জাবী " এর বিক্রেতা জানান,
এবারের ঈদে আমাদের কানেকশন থাকা নতুন ,নতুন ডিজাইনের সুতি এবং সিল্কের ছেলেদের পায়জামা পাঞ্জাবি আমাদের কালেকশনে থাকা মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল পর্যন্ত ব্যবসা তেমন ভালো ছিল না, আজ থেকে ব্যবসা ভালো হচ্ছে।সিলেট সিটি সেন্টারের "বর্ণ টেক্সটাইল " এর স্বত্বাধিকারী ফয়েজ উদ্দিন বলেন,এবারের ঈদে শাড়ির বাজার নেই বললেই চলে।
আমাদের এবারের ঈদের কালেকশনে আধুনিক, নান্দনিক ,তাঁতের শাড়ি ,জামদানি, সিল্ক কাতান,বুটিকস ,প্রিন্ট শাড়ি , থ্রি-পিছ এবং লুঙ্গির বিপুল সমাহার রয়েছে। তারপরও আমাদের এখানে বিক্রি হচ্ছে না সেভাবে। তারপরও আমি আশা করছি ঈদ যেহেতু বাকি আছে কয়েকদিন বিক্রি আবশ্য বাড়বে ।
সিলেট সিটি সেন্টারের "লাবণ্য ফ্যাশনের" বিক্রেতা জানান,আমাদের এখানে আসা ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ভারতীয় থ্রি-পিস। নিত্য নতুন ডিজাইনের এসব থ্রি-পিসের দাম দেড় হাজার থেকে শুরু করে ৫-৬ হাজার পর্যন্ত রয়েছে।
আরেক ব্যবসায়ী বলেন ,থান কাপড়ের চাহিদাও রয়েছে। থান কাপড়ের গজ ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০০ পর্যন্ত কোথাও আরো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। অন্য আরেক ব্যবসায়ী বলেন, দেশীয় কিছু ব্রান্ড আছে যেগুলো খুব ভালো বিক্রি হয়। এগুলোতে মানুষের আস্থা আছে। এর বাইরে হাতেগোনা কয়েকটা ছাড়া দেশীয় কাপড়ের ক্রেতা নেই। সবাই ভারতীয় কাপড় পছন্দ করেন। কারণ এসব কাপড়ের মান ভালো সে সাথে ডিজাইনেও ভিন্নতা রয়েছে।
শুকরিয়া মার্কেটের "আল কুমা" গার্মেন্টসের বিক্রেতা জানান,ব্যবসার অবস্থা মন্দা ছিল , তারপরও মোটামুটি ভাবে চলছে সামনে ঈদ ঘনিয়ে আসছে ব্যবসা আরো ভাল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তার কাছে দেশি এবং ইন্ডিয়ান জামা রয়েছে। কারণ মানুষ দোকানে এসেই ইন্ডিয়ান কাপড় খোঁজে। দেশীয় কাপড় যতই ভালো হোক তার প্রতি যেন মানুষের চরম আস্থার সঙ্কট রয়েছে। তাই ইন্ডিয়ান জামার দাম বেশি হলেও মানুষ কেনে। তিনি জানান,তার দোকানে দেশীয় যেসব জামা রয়েছে তার কোয়ালিটি ভালো হলেও মানুষ কিনতে চায় না। এবার এ পর্যন্ত যত বিক্রি হয়েছে তার মধ্যেও ভারতীয় থ্রি-পিছ বিক্রির শীর্ষে। তবে আজ থেকে ব্যবসা ভালো হচ্ছে।
শুকরিয়া মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী "পাঞ্জাবি ওয়ার্ল্ড" এর মালিক, রুহুল আমীন (রাহুল) বলেন - এবারের ঈদে আশানুরূপ ভাবে ব্যবসা হচ্ছে না। তারপরও এ ঈদে নিত্য নতুন সুতি এবং সিল্কের ছেলেদের পায়জামা পাঞ্জাবি আমাদের কালেকশনে থাকা মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে।গতকাল পর্যন্ত ব্যবসা ভালো ছিল না, আজ থেকে ব্যবসা ভালো হচ্ছে।
অপরদিকে মধুবন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের এখানে দেশীয় কোনো ব্রান্ডের দোকান নেই। কাপড় ব্যবসায়ীরা নিজেদের পছন্দ মতো কাপড় এনে ব্যবসা করছেন। তবে এখানে থাকা কাপড়ের দোকানগুলো মধ্যে সবচাইতে বেশি রয়েছে ভারতীয় শাড়ি, থ্রি-পিছ ও থান কাপড়।