কাইয়ুম চৌধুরীঃ
ইতিহাসের পাতায় পাতায় বিভিন্ন ভালোবাসার কাহিনি গাঁথা রয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভালোবাসা প্রকাশের পদ্ধতির ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। শাহজাহান-মমতাজের ভালোবাসার কথা পৃথিবীর বুকে তাদের স্মৃতিচিহ্ন তাজমহল আজও তাদের ভালোবাসাকে অমর করে রেখেছে।
কথাগুলো রূপকথার গল্প মনে হলেও এমন ভালোবাসার নিদর্শন রেখেছেন কথিত পাল বংশের রাজা চান্দিলাল পাল। নিজ রানির সুস্থতার জন্য নওগাঁয় ৩৬৫টি পুকুর খনন করে রূপকথার জন্ম দিয়েছেন।
নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার ইসবপুর ইউনিয়নের চকচান্দিরা গ্রামের লোকমুখে প্রচলিত, অষ্টাদশ শতাব্দীতে রাজা চান্দিলাল পাল প্রথম রানিকে প্রাসাদে নিয়ে আসেন। কয়েক বছর পর প্রেমে পড়ে দ্বিতীয় রানিকেও নিয়ে আসেন। দ্বিতীয় রানিকে রাজা প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। কিছুদিন পর রানি দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হন।
রাজা চান্দিলাল রাজ্যের সব কবিরাজ-হাকিমকে ডেকেও কোনো সুফল পান না। পরে পাশের রাজ্যের এক দক্ষ হাকিমের খবর পান। তিনি দূত মারফত হাকিমকে নিজ রাজ্যে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান। হাকিম আসার পর রানির রোগ সম্পর্কে সব খুলে বলেন রাজা। শুনে হাকিম রাজাকে পরামর্শ দেন, ৩৬৫টি পুকুর খনন করে রানিকে প্রতিদিন একটি করে পুকুরে যদি গোসল করানো হয়, তাহলে রানি দুরারোগ্য থেকে মুক্তি পাবেন।
হাকিমের কথায় রাজা চিন্তায় পড়ে যান। এত অল্প সময়ে কীভাবে এত পুকুর খনন করবেন? স্ত্রী বলে কথা দ্রুত রাজ্যের সব প্রজাকে দিয়ে পুকুর খননের কাজ শুরু করেন। দিনে একটি পুকুর খনন করা শেষ হয় আর রানি সেখানে গোসল করেন। এক বছর পর রানি কঠিন দুরারোগ্য থেকে মুক্তি পান।
সরেজমিনে চকচান্দিরা গ্রামে গেলে দেখা যায়, ৩৬৫টির প্রতিটি পুকুরের পাড়ে বন বিভাগের সুবিশাল সবুজ বনায়ন। বনের গাছের ডালে বিভিন্ন পাখির কলরব শুনতে পাওয়া যায়। এ ছাড়া এর পাশে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে রয়েছে বন বিভাগের নিজস্ব সবুজ বনায়ন, যেটি ভ্রমণপিপাসুদের জন্য অনেক আকর্ষণীয়। তবে যাতায়াতব্যবস্থা ভালো হলে অনেক দর্শনার্থীর ভিড় জমবে বলে জানান এলাকাবাসী।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, তারা তাদের বাপ-দাদাদের কাছ থেকে শুনেছেন রাজা চান্দিপাল তার ছোট রানির সুস্থতার জন্য এখানে প্রায় দেড় কিলোমিটারজুড়ে ৩৬৫টি পুকুর খনন করেন। রানি সুস্থ হওয়ার পর দুই রানি পাশাপাশি প্রাসাদে বসবাস করতেন। দুই রানির গোসলের জন্য আলাদা দুটি পুকুর খনন করা ছিল, যে দুটি এখন ‘দুই সতিনের পুকুর’ নামে পরিচিত। পুকুর দুটিতে গোসল করতে নামলে ইট-পাথরসহ অনেক মূল্যবান বস্তুর দেখা মেলে।
তারা আরও জানান, ৩৬৫টি পুকুর দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে অনেক মানুষ দেখতে আসে। এখানকার যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে অনেকেই এসে দুর্ভোগে পড়ে, অনেক আবার ফিরে চলে যায়।
######
কাইয়ুম চৌধুরী
সাবেক সাধারণ সম্পাদক
সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাব,চট্টগ্রাম