ছাতক প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জের ছাতকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ধীর গতিতে নামছে বন্যার পানি। মেঘালয় থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারি বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। পানি কমার সাথে সাথে ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। বন্যার পানির প্রবল স্রোতে ভেঙে গেছে বিভিন্ন সড়ক। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে অনেক এলাকা। এখনও পানির নিচে অনেক গ্রামীণ সড়ক। বন্যার পানিতে লন্ডভন্ড হয়েছে বীজতলা, ফসলের মাঠ, মাৎস্য খামার। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরছেন মানুষ। পানি কমতে শুরু হওয়ায় স্বস্থি ফিরেছে বন্যা আক্রান্ত মানুষজন। তবে ধীর গতিতে পানি কমার বিষয়টি মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। ঘরবাড়ি থেকে পানি নামায় আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে মানুষ আপন নীড়ে ফিরেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভাতগাঁও, সিংচাপইড়, দোলারবাজার, ছৈলা-আফজলাবাদ, চরমহল্লাহ, কালারুকা, ইসলামপুর ও নোয়ারাই ইউনিয়নের রাস্তাঘাট। একাধিক সড়কে পানির স্রোতে ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পিচঢালাসহ কোথাও কোথাও নিশ্চিহ্ন হয়েছে সড়কের আংশিক। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মধ্যে রয়েছে, ছাতক সুরমা সেতুর এ্যাপ্রোচ সড়কের উভয় পাশ, ছাতক-সিলেট সড়কের ঝাওয়া ও সুফিনগর নামক এলাকার পশ্চিম পাশ, ছাতক-দোহালিয়া-সুনামগঞ্জ সড়কের আকিজ ফ্যাক্টরী এলাকা, ব্রাক্ষনগাঁও, আন্ধারীগাঁও গ্রামের পশ্চিমে বিশাল ভাঙন। আন্ধারীগাঁও পয়েন্ট থেকে প্রতাপপুর পর্যন্ত প্রায় ৩কিলোমিটার সড়কের দক্ষিণ পাশে পানির স্রোতে ভাঙন। বুড়াইরগাঁও আলমপুর সড়ক, ধারণবাজার-আমরতল সড়কে বিশাল ভাঙন, মুক্তিরগাঁও অষ্টগ্রাম সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়ক, কালারুকা-রামপুর-তাজপুর সড়ক, জালালপুর-লামা রসুলগঞ্জ সড়ক, কৈতক-হায়দরপুর-খামারগাঁও সড়ক, জাউয়া-ছাতক সড়ক, জাউয়া-কচুরগাঁও সড়ক, বড়কাপন-শ্রীপুর সড়ক, গোবিন্দগঞ্জ-বিনন্দপুর সড়ক, বসন্তপুর সড়ক, হাসনাবাদ-জালালপুর রাস্তা। বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় উপজেলার প্রায় সব ক'টি কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে সুরমা নদীর বন্যার পানির প্রবল স্রোতে ছাতক-দোহালিয়া-সুনামগঞ্জ সড়কের আন্ধারীগাঁও এলাকায় সড়ক ভাঙনে এক সপ্তাহ ধরে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
শনিবার ওই ভাঙন পরিদর্শনে যান উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম কিরণ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মস্তাফা মুন্না, ছাতক সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম। পরিদর্শন শেষে লাখো মানুষের দূর্ভোগ লাঘবে আপাতত সড়কে ছোট যানবাহন চলাচলের জন্য সরকারী ভাবে ইউএনও ১লাখ, উপজেলা চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে ৫০হাজার ও ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে ৫০হাজারসহ দুই লাখ টাকার মাটি ভরাটের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী সাব্বির আহমেদ বলেন, বন্যায় উপজেলার আংশিক ব্যাপক মিলে ৫/৬ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কিছু সড়কে যান চলাচলের উপযোগি করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অধিক ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক উপজেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ নিয়ে সংস্কার করা হবে। সব মিলিয়ে বন্যায় প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ছাতক সওজ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী সালাহ উদ্দিন সুহাগ বলেন, ছাতক-দোয়ারার পুরো সড়ক পানির নিচে ছিল। পানি কমায় ভেসে উঠছে ক্ষতচিত্র। বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ছাতক সুরমা সেতুর উভয় এ্যাপ্রোচ সড়ক। এছাড়া দোয়ারাবাজার উপজেলার অংশে একাধিক স্থানে গর্ত ও ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের ঝাওয়া ও সুফিনগর এলাকায়ও একাধিক স্থানে গর্ত ও ভাঙন রয়েছে। তবে কত টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এ বিষয়ে তিনি আপাতত বলতে পারছেন না।