হাতির পালে মায়ের সাথে পাহাড়ের পাদদেশে ঘুরতে এসেছিল একমাস বয়সী হাতি শাবক। চলার পথে শাবকটি বিলের কাঁদায় আটকে যায়। পালের অন্য হাতির পাশাপাশি মা হাতিটিও শাবকটিকে তুলতে ব্যর্থ হয়। উপায় না পেয়ে নাড়িছেঁড়া ধনকে ফেলে পালের সাথে চলে যা মা-ও। মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) রাতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বাঁশখালীর জলদী রেঞ্জের জঙ্গল পাইরাঙের মুহুরী পাড়ায় ঘটে এঘটনা।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বাঁশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বুধবার সকালে বিলের কাঁদায় আটকানো হাতি শাবকটি স্থানীয় এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা উদ্ধার করেন। দীর্ঘক্ষণ কিছু না খেতে পেয়ে শারীরিক দুর্বল হয়ে উঠে ২০-৩০দিন বয়সী হাতি শাবকটি। স্থানীয়দের সহায়তায় আট-দশ লিটার গরুর তরল দুধ পান করানো হয়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে দিয়ে করানো হয় চেকআপও।
বাঁশখালীর জলদী রেঞ্জ কর্মকর্তা এমদাদুল হক জানান, বুধবার রাতে হাতি শাবকটি পাহাড়ে হাতির পালের চলাচলের পথে রেখে আসে এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা। কিন্তু হাতির পাল ওই এলাকায় রাতে এলেও শাবকটি নিয়ে যায়নি। বৃহস্পতিবার সকালেই শাবকটি নিজে নিজে তাকে আগেরদিন পরিচর্যা করা স্থানে চলে আসে। এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা বিষয়টি বন বিভাগকে অবগত করলে শাবকটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আবারও পরিচর্যায় নেয়া হয়। দুধ খাওয়ানো ও শারিরীক অবজারভেশনের পর উর্ধতন মহলের পরামর্শ মতে সন্ধ্যায় হাতি শাবকটি কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাঁশখালীর জলদী বিটের এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্য কামাল উদ্দিন বলেন, একটি মা ছাড়া বন্য হাতির শাবক মানব আদর স্নেহে কাবু হয়ে গৃহপালিত প্রাণীর বাচ্চার মতোই আচরণ করেছে। যত্ন নেয়া লোকজনের গা-ঘেষেই ছিল সারাটা দিন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, হাতির এ আচরণটি বড়ই অমানবিক। পালের কোন সদস্য দলছুট হলে তাকে পুনরায় আর দলে ভিড়ায় না। সে সদস্যটি ছোট বা বড় হউক। এ শাবকটির বেলায়ও তেমনটি ঘটেছে।দল প্রধানের কারণে মা হাতিও নাড়িছেঁড়া ধনকে সাথে নিতে পারেনি। আর আগেরদিন যত্ন পাওয়া মানুষের মাঝেই ফিরে আসে শাবকটি। তাকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়।
কক্সবাজারের ডুলহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ইনচার্জ (রেঞ্জ কর্মকর্তা) মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, বাঁশখালী হতে একটি হাতি শাবক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর পার্কে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রায় একমাস বয়সী পুরুষ শাবকটি শারিরীক ভাবে দুর্বল। এর আগেও তিনমাস বয়সী একটি নারী হাতি শাবক টেকনাফ থেকে উদ্ধারের পর পার্কে আনা হয়েছিল। তার নাম যমুনা, এটার বয়স এখন দু’বছর।
রেঞ্জ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম আরো বলেন, হাতি শাবক লালন-পালন অত্যধিক ব্যয়বহুল। প্রতিদিন এক ডজন ল্যাকটুজেন (শিশুদুধ) খাওয়াতে হয়। বছর দুয়েক পরেই প্রাকৃতিক খাবারে ধীরে ধীরে অভ্যস্থ করা সম্ভব। যমুনার মত করেই নতুন শাবকটিকে পরিচর্যা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
WWW.DESHYNEWS24.COM/REGISTRATION NO-52472/2024
Leave a Reply