বাংলাদেশের উন্নয়ন উন্নতির অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা রেমিট্যান্স । দেশের জিডিপিতে প্রায় ১২ শতাংশ অবদান রাখা এই রেমিট্যান্স পরিণত হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের উল্লেখযোগ্য অংশীদার হিসাবে। করোনাকালীন অর্থনীতিতেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল এই রেমিট্যান্স। প্রবাসীদের অতি কষ্টার্জিত রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে মজবুত হচ্ছে দেশের অর্থনীতির ভিত নির্মিত হচ্ছে বিভিন্ন সেতু ফ্লাইওভার সহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি শেষ না হতেই ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে ব্যবসা-বাণিজ্য পর্যটন শিল্পে ধস ও রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা প্রতিকূলতায় সংকটে পড়া মধ্যপ্রাচ্য সহ প্রবাসীদের নিয়োগদাতা দেশগুলোতে কর্মী ছাঁটাই ও বেতন বন্ধসহ বহুবিধ সমস্যার মোকাবিলা করছেন বিভিন্ন দেশে কর্মরত রেমিট্যান্স যোদ্ধা ও প্রবাসী ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে তুরস্ক ও সিরিয়ায় উচ্চ মাত্রায় ভূমিকম্পে সারাবিশ্ব অর্থনীতি আরো একধাপ পিছিয়ে পড়বে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, বিভিন্ন দেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্জিত অর্থ- রেমিট্যান্স যারা দেশে পাঠাচ্ছে, তাদেরকে দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। তাদের প্রতি বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোর অসহযোগিতার অভিযোগের অন্ত নেই। দালালের দৌরাত্ম্য, পাসপোর্ট জটিলতা, কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা নিয়ে অস্বস্তিকর পরিবেশ নতুন কোনো বিষয় না হলেও তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মৃত্যুর পর প্রবাসীদের প্রতি অবহেলাও। প্রবাসীদের অস্বাভাবিক মৃত্যু বৃদ্ধি পেলেও তা প্রতিরোধে বা ঘটনা তদন্তে উদ্যোগী নয় দূতাবাসগুলো। সম্প্রতি দেশে বেড়াতে আসা বহু প্রবাসীর অভিযোগ, দেশে তারা ন্যূনতম অধিকারটুকুও পাচ্ছেন না এবং তাদের তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকের মর্যাদাও দেওয়া হচ্ছে না। প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে, সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স প্রেরণকারী মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমিকরা দেশে অনেক বেশি অবহেলার শিকার হচ্ছেন। বিমান বন্দরে নেমেই তারা ভোগান্তিতে নিপতিত হন। কেউ এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে ফেরার সময় অযাচিত কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়। আবার বিভিন্ন দেশে প্রবাসীরা বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ, করোনার কারণে কাজ হারিয়ে ফেলা, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া, প্রতারিত হওয়া, ভিসা আকামার তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রবাসী কর্মীদের মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। অনেক প্রবাসীর মৃত্যুর পরে বিদেশের মাটিতেই দাফন হচ্ছে, টাকার অভাবে কিংবা আইনের জটিলতায়। এসব প্রবাসীদের বেশির ভাগ মৃত্যুর কারণ নিয়েও সঠিক অনুসন্ধান হয়না বললেই চলে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ১৭৪টি দেশে বাংলাদেশের শ্রমিকদের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২০ লাখের বেশি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ৪ এপ্রিল ২০২২ থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কমতে শুরু করে। সেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় গত ১ জানুয়ারি ২০২ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করেন এইমর্মে যে- বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমজীবী মানুষের উপার্জিত বৈদেশিক আয় বৈধ পথে দেশে আনার ব্যাপারে উৎসাহিত করার জন্য ২ শতাংশ প্রণোদনা থেকে বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। মানুষের সার্বিক জীবনমান উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের গুরুত্ব বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়।
কিন্ত দুঃখের বিষয় এতেও রিজার্ভের নিম্নমুখীতা ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রবাসীরা বৈধ পন্থা থেকে অবৈধ পন্থায় দেশে টাকা পাঠাচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে। সৌদি আরবের কিছু প্রবাসীর সাথে হুন্ডিতে টাকা পাঠানো নিয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন ব্যাংকে টাকা পাঠাতে গেলে সময় দেওয়া লাগে, কাগজপত্র সব ঠিকঠাক দেওয়া লাগে এবং গাড়ীবাড়াও শুনতে হয় যা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না আর হুন্ডিতে টাকা পাঠানোর জন্য এতোসব ঝামেলা পোহাতে হয়না রুমে এসে নিয়ে যায় বাড়ীতে টাকা পৌঁছে দেয়, অনেকে আবার আগে বাড়ীতে টাকা পৌঁছে দেয় পরে এসে রিয়াল নিয়ে যায়, তাছাড়া এই হুন্ডি পদ্ধতিতে বৈধ অবৈধ সবার জন্য সহজ। তাই সরকারী প্রণোদনা থাকলেও প্রবাসীরা অবৈধ পদ্ধতিকে ব্যবহার করে থাকে, সেই জন্য সরকার লক্ষ লক্ষ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সার্বিক পর্যালোচনায় এটি সুস্পষ্ট যে, নিত্যপণ্য ও মুদ্রার বাজারে চরম অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। দ্রুততার সঙ্গে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, চাহিদা-সরবরাহে ভারসাম্যহীন অসঙ্গতি ডলার মানদণ্ডে টাকার মূল্যমানের নিন্মগতি, আমদানি খাতে বাজার ব্যবস্থার বেসামাল পরিস্থিতি এখন থেকেই গুরুত্বসহকারে আমলে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ইতোমধ্যে সামাজিক-রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব ও গণবিক্ষোভ সংঘাতের রূপ নিচ্ছে। যথাযথ বিশ্লেষণে বিষয়গুলো সংকট মুক্তির লক্ষ্যে দেশের আপামর জনগণকে পর্যাপ্ত প্রচার- প্রচারণার মাধ্যমে সচেতন করা উচিত। এবং অবৈধভাবে বসবাসকারী প্রবাসীদের বৈধকরনে সরকার যদি সঠিকভাবে যথাযত কাজ করে তাহলে লক্ষ লক্ষ প্রবাসী বৈধ হয়ে বৈধভাবে কাগজপত্র জমা দিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে বৈধভাবে টাকা পাঠিয়ে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার নিম্নগতি রুখতে পারে বলে প্রবাসীরা মনে করে। অন্যথায় হুন্ডির মতো অবৈধ পথে টাকা পাঠানো বন্ধ করা যাবে না এবং কাঙ্ক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।
মোঃ দিদারুল আলম (দিদার) #সাংবাদিক ও হিউম্যান রাইটস একটিভিস্ট।
WWW.DESHYNEWS24.COM/REGISTRATION NO-52472/2024
Leave a Reply